৩ পুলিশসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলবে
আইন-আদালত ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
প্রায় পাঁচ বছর আগে পল্লবী এলাকার ইশতিয়াক হোসেনকে (জনি) থানায় এনে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি চলতে আর আইনগত বাধা নেই। নির্যাতনের অভিযোগে পল্লবী থানার তৎকালীন তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।
ওই মামলা বাতিল চেয়ে দুই আসামির (পুলিশ কর্মকর্তা) করা আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে আজ বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ওই মামলার কার্যক্রমে ইতিপূর্বে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে হাইকোর্ট বলেছেন, আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে হবে।
হাইকোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন পল্লবী থানার তৎকালীন এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান। আদালতে তাঁদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। বাদী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম ও বদিউজ্জামান তপাদার। মামলার বাদী নিহতের ভাই ইমতিয়াজ হোসেনকে আইনগত সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
আইনজীবী বদিউজ্জামান তপাদার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ গঠনের পর মামলাটি বাতিল চেয়ে পল্লবী থানার তৎকালীন এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে গত বছরের মার্চে হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। আজ হাইকোর্ট রুল খারিজ করে মামলার কার্যক্রমে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন। ফলে পুলিশের ওই কর্মকর্তাসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম চলতে আইনগত কোনো বাধা নেই। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেকশন-১১, ব্লক-বি ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. সাদেকের ছেলে মো. বিল্লালের গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক হোসেন ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হোসেনকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে সুমনের ফোন পেয়ে পুলিশ এসে দুই ভাইকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করা হয়। এ সময় ইশতিয়াকের অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, আবদুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা ও কনস্টেবল নজরুল, সোর্স সুমন ও রাসেলকে। আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন তদন্ত প্রতিবেদন দেন। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা পাঁচ আসামি বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান (জাহিদ), এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান (মিন্টু) এবং পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) সুমন ও রাশেদ। আসামিরা এখন জামিনে আছেন বলে জানান আইনজীবী বদিউজ্জামান তপাদার।