৪ ভাই সবাই এমপি প্রার্থী
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনায় রয়েছেন টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের চার ভাই। এ পরিবারের দুই সন্তান জাতীয় রাজনীতির হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)।
এদের মধ্যে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর-বাসাইল) আর টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)।
এছাড়াও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন তাদের ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী আর টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোনিত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন শামীম আল মনছুর আজাদ সিদ্দিকী।
জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামটিতেই রয়েছে তাদের পৈত্রিক নিবাস। যদিও টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসন থেকে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব পান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েই এমপি নির্বাচিত হন তিনি।
ওই বছরই সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে মন্ত্রিত্ব হারান এবং দলীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পদ থেকে অপসারিত হন। এরপর সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।
পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হওয়া উপ-নির্বাচনে তার আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী জয়ী হন। ওই উপ-নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে কাদের সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ঋণখেলাপির কারণে উচ্চ আদালত তাকে অযোগ্য ঘোষণা করেন।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সোহেল হাজারীকেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে নির্বাচনের অংশগ্রহণ করবেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী ঝিন্টু।
মুক্তিযুদ্ধের কাদেরীয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা। তিনি টাঙ্গাইল-৪ এবং টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
তবে ইতোপূর্বে ১৯৯৬ সালে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সখিপুর ও বাসাইল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৯ সালে দল থেকে বেরিয়ে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শওকত মোমেন শাহজাহানের কাছে পরাজিত হন।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও ওই আসন থেকেই পূনরায় পরাজিত হন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে কালিহাতী আসন থেকেও কাদের সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী আর বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শাহজাহান সিরাজ। তবে সিদ্দিকী পরিবারের ওই দুই ভাইকে এ নির্বাচনে পরাজিত করে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ নির্বাচিত হয়ে জোট সরকারের মন্ত্রিত্ব পান।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দুটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যদিও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একাধিক আসনে বঙ্গবীরের নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, কাদের সিদ্দিকীর আইনি জটিলতা নিরসনের প্রক্রিয়া চলছে। আশা রাখি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তার কোনো সমস্যা থাকবে না। এদিকে কালিহাতী আসন থেকে কাদের সিদ্দিকীর আরেক ভাই শামীম আল মনছুর আজাদ সিদ্দিকীও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। কোনো কারণে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করতে না পারলে তিনিই দলের হয়ে লড়বেন। আবার এমনও হতে পারে, ভাইয়ের জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
এছাড়াও ২০০১ ও ২০০৮ সালে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে এবং ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়ে পরাজিত হন মুরাদ সিদ্দিকী। তিনি একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক বছর ধরে নিয়মিত সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠক ও জনসভা করে যাচ্ছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ারও চেষ্টা করেছিলেন মুরাদ সিদ্দিকী।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের উন্নয়ন এবং মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছি। জনগণও আমার সঙ্গে আছে।’